হয়ে যাক ইংরেজিতে কথা বলার হাতেখড়ি!
কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলব – এই দুশ্চিন্তা রীতিমতো জাপটে ধরে আমাদের। কিছু নিয়মিত অনুশীলন আর প্রচেষ্টার অভাবই মূলত এই বলার জড়তার কারণ। পড়াশোনা কিংবা চাকরির জন্য, আন্তর্জাতিক বিশ্বের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে মৌখিক ইংরেজি -তে দক্ষ হওয়াটা র্বতমান বিশ্বে প্রায় অপরিহার্য – এই কথাটা আমরা সবাই জানি। তাহলে এখন ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার উপায় ?
এই লেখায় আলোচনা করছি মৌখিক ইংরেজি নিয়ে বহু পরীক্ষিত কয়েকটি টিপস, যা অনুসরণ করতে পারলে আপনার অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলার দিন সত্যিকার অর্থেই অতি অদূরে।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ১: চিন্তাটা ইংরেজিতে করতে হবে
আমরা যখন ইংরেজিতে কথা বলি, তখন আগে কী বলব তা বাংলায় ভেবে নেই। তারপর সেটা মনে মনেই ইংরেজিতে অনুবাদ করি এবং তারপর ইংরেজিতে বলি। এর ফলে বারবার বাংলা এবং ইংরেজিতে আমাদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। যে কারণে, কথায় ফ্লুয়েন্সি থাকে না। তাই, আমাদের চিন্তাটাও ইংরেজিতেই করতে হবে। শুধুমাত্র কথা বলার সময় না। যেকোন সময়ই। যখনই আমরা নিজের মনে কিছু চিন্তা করবো, চেষ্টা করতে হবে সেই চিন্তাও যাতে ইংরেজিতে হয়।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ২: একা একা কথা বলা।
যদি ইংরেজিতে চিন্তা করার অভ্যাসটি রপ্ত করে ফেলতে পারেন, তাহলে আশে পাশে যখন কেউ নেই; সেই চিন্তাগুলোই নিজেকে নিজে বলে ফেলেন। নিজের কানে যখন নিজের কথা শুনতে পাবেন, নিজের ভুলগুলোও নিজেই ধরতে পারবেন। এবং প্রতিবার প্র্যাকটিসের সময় বুঝতে পারবেন যে, আগের চেয়ে ফ্লুয়েন্সি কতটা বাড়লো।
ইংরেজি কথা বলার সহজ উপায় ৩: গ্রামার নিয়ে বেশি চিন্তা না করা।
ইংরেজিতে কথা বলতে পারদর্শী হতে হলে প্রথমেই মাথায় যেই বিষয়টি ভালো করে ঢুকিয়ে নিতে হবে সেটি হলো, স্পোকেন ইংলিশে গ্রামার অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ইংরেজি কথা বলা নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় গ্রামার নিয়ে। দেখা যায়, গ্রামার নিয়ে এমনিতে কোন সমস্যা নেই। নির্ভুল গ্রামারে লিখে যেতে পারছি। কিন্তু বলতে গেলেই গ্রামারে টুকটাক ভুল হয়েই যাচ্ছে। এবং তখনই আমরা থেমে যাচ্ছি। এ কারণেই, মৌখিক ইংরেজি প্র্যাকটিসের সময় গ্রামার নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো যাবে না। ভুল হচ্ছে? হোক! কথা বলা থামানো যাবে না। গ্রামারের ভুলগুলো যতদিন যাবে কমে আসবে। কিন্তু গ্রামারের কথা ভেবে যদি বলা থামিয়ে দেই, তবে ফ্লুয়েন্সি কখনোই আসবে না।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ৪: প্রচুর ইংরেজি শোনা:
আমি যত না ইংরেজি বই পড়ে শিখেছি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি শিখেছি ইংরেজি মুভি আর সিরিজ দেখে। টিভি সিরিজ এবং মুভি শুধু আমার ইংরেজি শব্দভাণ্ডারই বাড়ায় নি, বরং ইংরেজিতে কথা বলাও সহজ করেছে। এবং এই সিরিজ বা মুভি দেখতে গিয়েই আমি বুঝলাম ইংরেজির কিছু আলাদা শব্দ থাকে। সেগুলোর বাংলা অর্থ করলে দেখা যাবে কিছুই বোঝা যাবে না। সেগুলো যত না শব্দ বা বাক্য, তার চেয়ে বেশি এক্সপ্রেশন। ইংরেজিতে কথা বলার সময় এই এক্সপ্রেশনগুলোর ব্যবহার আমাদের কথাকে আরো শ্রুতিমধুর করে তোলে। তাই, প্রচুর ইংরেজি সিরিজ আর মুভি দেখতে হবে।
ইংরেজি কথা বলার সহজ উপায় ৫: ইংরেজি গান গাওয়া, ইংরেজিতে গল্প বলা।
ইংরেজিতে গান গাওয়ার সুবিধাটা হচ্ছে, সুরে সুরে গান গেয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইংরেজি বলার প্র্যাকটিসটাও হচ্ছে, এই সুর তালের কারণে আমাদের খুব একটা ভেবেও গাইতে হচ্ছে না, আবার ইংরেজিতে কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ ও আয়ত্তে আসছে, যার ফলে না থেমে ইংরেজি উচ্চারণটা সহজ হচ্ছে। নিজেকে পরীক্ষা করার খুব ভাল আরেকটা উপায় হচ্ছে, ইংরেজিতে গল্প বলা। যে গল্পটা আমরা খুব ভাল জানি, তা বলতে গেলে আমাদের খুব একটা ভাবতে হয় না। অনর্গল বলে যেতে পারি। সেই গল্পটাই ইংরেজিতে আমরা ঠিক কতটা ভাল বলতে পারছি, সেটা বুঝলেই নিজের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভাল একটা ধারণা হয়ে যায়। আমরা কতো কতো সিনেমাই তো দেখি। এগুলোর মাঝে আমাদের প্রিয় সিনেমার প্রায় প্রতিটি ঘটনা হুবুহু মনে থাকে। চমৎকার একটি ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার উপায় হতে পারে, আমাদের প্রিয় সিনেমা নিয়ে কথা বলা।
ইংরেজি কথা বলার সহজ উপায় ৬: চর্চার জন্যে একজন পার্টনার যোগাড় করা
যতোই জানা থাক, চর্চা না করলে মৌখিক ইংরেজি -তে ভালো হওয়া যাবে না। চর্চা করলে muscle memory তৈরি হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একই কাজ বার বার করতে করতে যখন আমাদের muscle অভ্যস্ত হয়ে যায় সেটা করতে করতে, সেই স্মৃতিটাকে muscle মেমরি বলে। এরপর সেই কাজ করতে গেলে নতুন করে তাই আর ভাবতে হয় না।
মাসল মেমরি তৈরীর সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে, এমন একজনকে খুঁজে নেয়া যে চেষ্টা করে যাচ্ছে ইংরজিতে ভাল দক্ষতা অর্জন করতে। এরপর নিজেদের মধ্যে ঠিক করা, যে এখন থেকে একে অপরের সাথে কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলব। কথোপকথনের মাধ্যমে খুব কম সময়েই আপনি অনেক এগিয়ে যাবেন। একটানা ইংরেজি বলতে গেলে মুখে সবসময় হয়তো শব্দ আসবেনা, তবে চেষ্টা করতে থাকতে হবে।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ৭: প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখা
কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলব – এই দুশ্চিন্তায় ভোগা সবাই প্রথম কয়দিন বেশ আগ্রহ নিয়ে ইংরেজি শেখা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে, তারপর তাদের আগ্রহটা কেমন মরে যায়, কিছুদিনের ভেতর লক্ষ্যটি তারা বেমালুম ভুলে বসে থাকে! এজন্যই শেখা আর হয়ে ওঠে না কোনদিন। সপ্তাহে একদিন দশ ঘন্টা শেখার চেয়ে প্রতিদিন দশ মিনিট করে সময় দিন, দেখবে্ন ফাটাফাটি উন্নতি হচ্ছে শেখায়। স্মার্টফোনে আজকাল অসাধারণ সব অ্যাপ আছে, অবসরে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি কমিয়ে এগুলো একটু ঘেঁটে দেখার অভ্যাস করলে দ্রুতই এগিয়ে যাবেন অনেকদূর।
ইংরেজি কথা বলার সহজ উপায় ৮: শুধু শব্দ না, Phrase শেখা
ইংরেজি যাদের ফার্স্ট ল্যাংগুয়েজ তাদের সাথে অন্যদের পার্থক্য শুধু ফ্লুয়েন্সিতে না। বরং শব্দচয়ন এবং কথার ধরণেও। ইংরেজিতে কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ, আর একদম সঠিক গ্রামার ব্যবহার করে কথা বললেও দেখা যায়, একজন স্থানীয়ের সাথে কিছুটা পার্থক্য থেকেই যায়। যেমন আমরা হয়তো কেউ কেমন আছে জানতে চাইব, “How are you” বলে। সেই একই কথা একজন স্থানীয় হয়তো জানতে চাইবে “What’s up” বলে।
তাই,
শব্দ শেখার চেয়েও বেশি উপকারী হচ্ছে, Phrase বা Expression শেখা।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ৯: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে যা হবে, আমরা ইংরেজি বলার সময় আমাদের বাচনভঙ্গিও দেখতে পাবো। অধিকাংশ সময় যেটা হয়, আমরা ইংরেজিতে কথা বলার সময় আমাদের ভুল নিয়ে এতটাই সচেতন থাকি যে আমাদের আচরণে সেটা ফুটে উঠে।
যখন আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করবো, তখন নিজেদের এই ভুল বুঝতে পারবো এবং নিজেদের আড়ষ্টতা কাটানোর জন্য কাজ করবো। ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার উপায় হিসেবে ইংরেজিতে নিজের পরিচয় দেয়া শুরু করা, পছন্দের যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা এসব দিতে এই প্র্যাক্টিস শুরু করা যেতে পারে।
ইংরেজিতে কথা বলার সহজ উপায় ১০: সংকোচ কাটিয়ে তোলা
সবশেষে আমাদের সবার সেই চিরাচরিত অজুহাত, “এই আরেকটু শিখে নেই, তারপর অফিশিয়ালি বলা শুরু করবো!”
সেই ‘আরেকটু’ শেখা আর কোনদিন হয়না, বলাও শুরু করা হয়না। তাই লজ্জার ব্যাপারটি ছাড়তে হবে। আজকে ভুলভাল ইংরেজি বললে কেউ আপনাকে নিয়ে হাসতে পারে, কিন্তু দুইদিন পর সেটি কেউ মনে রাখবে না। ইংরেজি বলতে Fluent হতে চাইলে বলার অভ্যাস করতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই। অনেক আটকাবে, শব্দ খুঁজে পাচ্ছেননা এমন হবে, কিন্তু অভ্যাসটা গড়ে উঠবে ঠিকই।
সব ভয়, লজ্জা কাটিয়ে উঠে আমাদের কথা বলতে হবে।
Accent বা উচ্চারণ নিয়ে অনেকের ভীষণ জড়তা কাজ করে, এই সমস্যাটি কেবল উপমহাদেশেই, বাকি পৃথিবীর মানুষের এটি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই! চোস্ত ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে পারা না পারা দিয়ে কিচ্ছু আসে যায় না, এটি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কিছু নেই। চীনাদের ইংরেজি উচ্চারণের চেয়ে দুর্বোধ্য জিনিস আর হয় না, অথচ এই উচ্চারণ দিয়েই সারা পৃথিবীজুড়ে ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে তারা, বিদঘুটে উচ্চারণ তাদের কোথাও আটকাতে পারেনি। তাহলে আপনাকে আটকাচ্ছে কিসে?
Thanks for the information.
ReplyDelete